আমরা পূর্বেই জেনেছি যে সাধারণত ছেলে-মেয়েদের ১০-১৯ বছর বয়সের সময় কালকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এ সময়ে ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়। তবে আবহাওয়া, স্থান, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ও মানের তারতম্যের কারণে এক একজনের বয়ঃসন্ধিকালের শুরুর সময়ে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। হরমোন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যার কারণে বয়ঃসন্ধিকালের পরিববর্তনগুলো ঘটে। মেয়েদের শরীরে ও মনে বিভিন্ন পরিবর্তনে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন নামক দুটি হরমোন কাজ করে আর ছেলেদের যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনসমূহ ঘটে তা টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের কারণে হয়।
বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক চাপ : ছেলে ও মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। কারণ পরিবর্তনগুলো অনেকটা আকস্মিকভাবে শুরু হয়। এর সাথে পরিচিত না থাকার কারণে তারা আতংকিত হয়ে পড়ে এবং অপরাধবোধে ভোগে। এসময় তাদের বুঝিয়ে বললে তারা আতংকিত হবে না এবং তাদের মনে কোনো অপরাধবোধ কাজ করবে না। এ ধরনের অপরাধবোধ ও মানসিক দুশ্চিন্তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফলে ছেলেমেয়েদের মনে সর্বক্ষণ একটা অস্বস্তি কাজ করে। তারা মানসিক চাপের সম্মুখীন হয় এবং অনেক সময় পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো : বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে এবং এ সম্বন্ধে করণীয় বিষয়ে পূর্ব ধারণা থাকলে, কিশোর-কিশোরীদের মানসিক প্রস্তুতি থাকে। ফলে তারা বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারে, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয় না এবং সম্ভাব্য রোগব্যাধিও প্রতিরোধ করা যায়। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন ঘটলে মা-বাবা, বড় ভাই-বোন বা নির্ভরযোগ্য অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেতে পারে। ফলে সংকোচ কেটে যাবে এবং একা থাকার প্রবণতা কমে যাবে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে আবেগিক পরিবর্তনও ঘটে। এ বয়সে তাদের যে মানসিক পরিবর্তন ঘটে তার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাদের সাথে মা বাবা ও অভিভাবকদের বন্ধুসুলভ ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। তাদেরকে মানসিক দিকসহ অন্য সব ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান ও সাহস যোগাতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তাদের নিজেদেরকেও সচেষ্ট থাকতে হবে। তাদের প্রথম কাজ হবে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করা। ভালো গল্পের বই পড়লে, সাথীদের সাথে খেলাধুলা করলে মনে প্রফুল্লতা আসবে এবং মানসিক চাপ সামলানো সম্ভব হবে।
কাজ-১ : শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে তালিকার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক চাপ থেকে উত্তরণের কয়েকটি উপায় খাতায় লেখ। |